Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২
মো. ইউসুফ রানা মন্ডল
কৃষি আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে কৃষিখাত থেকে। সীমিত জমি থেকে জোগান দিতে হয় বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য সম্ভার। তাই বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো কৃষক ও কৃষির উন্নয়ন। কিন্তু বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারনেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, জ্বলোচ্ছ্বাস, খরা, পোকামাকড় ও রোগবালাই এসব পরিবেশগত বৈরিতার কারণে আমাদের কৃষকেরা বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। তা সত্ত্বেও আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক দমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সুকৌশলে বালাই সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে ফসল তোলাই কৃষকের মূল লক্ষ্য। কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কিন্তু মাঠ থেকে শুরু করে গোলাঘর পর্যন্ত, উৎপাদিত কৃষি পণ্যের একটা বিরাট অংশ নষ্ট হচ্ছে ইঁদুরের ক্ষতির কারনে।  ইঁদুরের আক্রমণের ফলে ফসলের যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে অন্তরায়। এ ছাড়াও কৃষি জমির পরিমাণ আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম ইঁদুর উপদ্রুত এবং বংশ বিস্তারকারী এলাকা হচ্ছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানকার উপকূলীয় লোনা ও মিঠাপানির মিশ্রণের এলাকাগুলো ইঁদুরের বংশ বিস্তারের জন্য বেশ অনুকূল। ফসলের মাঠ ছাড়াও এ অববাহিকায় অবস্থিত হাট-বাজার ও শিল্পাঞ্চলগুলোতও ইঁদুরের উপদ্রব বেশি পরিলক্ষিত হয়। ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর ছেদন দন্ত সদা বর্ধিষ্ণু বিধায় উক্ত ছেদন দন্ত ছোট রাখার জন্য এরা প্রতিনিয়তই কাটাকুটি করে। যদি ইঁদুরের এ অভ্যাস বন্ধ রাখা হয়, তবে তার দাঁত অনেক বড় হয়ে যাবে। সুতরাং দাঁত ছোট রাখার জন্য তাকে প্রতিনিয়তই কাটাকুটি করতে হয়। এ কারণে দেখা গেছে যে, ইঁদুর যে পরিমাণ ভক্ষণ করে তার দশ গুণ সে কেটে নষ্ট করে। সারা পৃথিবীতে ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর প্রায় ১৭০০টি প্রজাতি আছে। তন্মধ্যে প্রায় ১৮-২০ টি প্রজাতি আপদ/বালাই রুপে চিহ্নিত।
ইঁদুর একটি চতুর ও নীরব ধ্বংসকারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইঁদুর প্রাণীটি ছোট হলেও ক্ষতির ব্যাপকতা অনেক। এরা যে কোনো খাদ্য খেয়ে বাঁচতে পারে। যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। অল্প বয়সে বাচ্চা দিতে পারে। প্রতিনিয়ত ইঁদুর আমাদের উৎপাদিত ফসলকে নষ্ট করছে। ক্রমবর্ধমান হারে খাদ্যের প্রয়োজনে দেশে বর্তমানে এক ফসলের পরিবর্তে বহুবিধ ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এর ফলে ইঁদুর সর্বদা মাঠেই খাদ্য পাচ্ছে। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, আলু ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭ শতাংশ এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫ শতাংশ ক্ষতি করে।
ইঁদুর শুধু আমাদের খাদ্যশস্য খেয়ে ও কেটে কুটে নষ্ট করে না, এদের মলমূত্র, লোম খাদ্য দ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ ও ক্রিমিরোগসহ ৬০ ধরনের রোগ ছড়ায়। প্লেগ নামক মারাত্মক রোগের বাহক হচ্ছে ইঁদুর। এরা মাঠের ও ঘরের শস্য নষ্ট ছাড়াও বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন তার ও কম্পিউটার যন্ত্র কেটে নষ্ট করে। এ ছাড়া বড় সড়ক, বাঁধ, রেললাইনে গর্ত করে তা ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে বন্যার পানি ঢুকে এ সব অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য এর ক্ষতির পরিমাণ পরিসংখ্যানগতভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কাজেই ফসল ও সম্পদের ক্ষতি রোধ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দূষণমুক্ত পরিবেশের স্বার্থে ইঁদুর সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষেতখামার, বসতবাড়িসহ সর্বত্র ইঁদুরমুক্ত করার লক্ষ্যে ইঁদুর নিধনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১৯৮৩ সাল থেকে ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বিগত ৫ বছরে ইঁদুর নিধন অভিযান কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে আমন ফসল রক্ষা পেয়েছে তার হিসেব সারণি দ্রষ্টব্য।
সূত্র : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
বর্তমানে সারাবিশ্বে পোলট্রি শিল্প ইঁদুর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে এবং পোলট্রি উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে মুরগির ডিম ও ছোট বাচ্চা খেয়ে ফেলে। পোলট্রি শিল্পে ইঁদুর দ্বারা অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে লক্ষ্য রেখে মুরগির খামারিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যাতে সমন্বিতভাবে ইঁদুর দমনে অংশগ্রহণ করে এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২ এর উদ্দেশ্য : ইঁদুর প্রতিরোধে কখনও এককভাবে সম্ভব নয়। সকলের সমন্বয়ে সমন্বিতভাবে দমন ব্যবস্থা করতে হবে। ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২ এর উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে-
কৃষক, কৃষাণী, ছাত্রছাত্রী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আইপিএম/আইসিএম এসব ক্লাবের সদস্য, সিআইজি, ডিএই এর বিভিন্ন কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোসহ সর্বস্তরের জনগণকে ইঁদুর দমনে উদ্বুদ্ধ করা; ইঁদুর দমনের জৈবিক ব্যবস্থাপনাসহ লাগসই প্রযুক্তি কৃষি কর্মীদের মাধ্যমে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো; ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিল্পকারখানা ও হাঁস মুরগির খামার ইঁদুরমুক্ত রাখার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা; আমন ফসল ও অন্যান্য মাঠ ফসলে ইঁদুরের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে রাখা; গভীর ও অগভীর নলকূপের সেচের নালার ইঁদুর মেরে পানির অপচয় রোধ করা; রাস্তাঘাট ও বাঁধের ইঁদুর নিধনের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা; ইঁদুরবাহিত রোগের বিস্তার রোধ করা এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা; সম্ভাব্য ক্ষেত্রে গণযোগাযোগ বিশেষ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের ব্যাপারে জোর দেয়া।
অভিযানের সময় ও উদ্বোধন
এক মাসব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযান সারাদেশে একযোগে পরিচালনা করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে ইঁদুর নিধন অভিযান, ২০২২ এর উদ্বোধনের পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উদ্বোধন করা হবে। গত বছরের অভিযানের কার‌্যাবলীর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইঁদুর নিধনকারীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে। অঞ্চল, জেলা পর্যায়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট জেলার সংসদ সদস্য/চেয়ারম্যান, পার্বত্য জেলা পরিষদ/জেলা পরিষদ/প্রশাসক/উপজেলা চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/ মেয়র অথবা তার মনোনীত ব্যক্তি দ্বারা করা হয়ে থাকে। উপজেলা পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য/উপজেলা চেয়ারম্যান/তার মনোনীত প্রতিনিধি দ্বারা করা হয়ে থাকে।
ইঁদুর নিধনে পুরস্কার প্রদান    
জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২১ বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে পুরস্কার দেয়া হয়। অঞ্চলে অতিরিক্ত পরিচালকগণ নিজ অঞ্চলের পুরস্কার পাবার যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই বাছাইপূর্বক মনোনয়নের তালিকা সদর দপ্তরে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে সদর দপ্তরে প্রেরিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে জাতীয় ও অঞ্চল পর্যায়ের পুরস্কারের প্রার্থীদের প্রাথমিক মনোনয়ন প্রদান করা হয় যা জাতীয় কমিটির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত বছরের ইঁদুর নিধনকারীদের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে ৫ (পাঁচ)টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। যারা পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন তাদের ক্রমানুসারে ১টি ক্রেস্ট, ১টি সনদপত্র ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
ইঁদুর অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং লাজুক প্রাণী বিধায় সাধারণ বিষটোপ এবং ফাঁদ ব্যবহার করে সহজে ইঁদুর দমন করা বেশ কষ্টসাধ্য। এছাড়া ইঁদুর সর্বদা খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য স্থান পরিবর্তন করে বিধায় এককভাবে ইঁদুর দমন কার্যকর হয় না। এ কারণে সমাজের সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে একযোগে দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়। ফসলের মাঠে ইঁদুর দমনের জন্য বিভিন্ন প্রকারের যান্ত্রিক ফাঁদ ও বিষটোপ এবং ঘর ও গুদামের ইঁদুর দমনের জন্য বিষটোপের পাশাপাশি আঠাযুক্ত ফাঁদ ব্যবহার করলে অধিকতর ফলপ্রসু হয়। তবে বিষটোপ গুদামজাত, পরিবহন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বদা এমন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে বিষটোপগুলি মানুষ ও পশু খাদ্যের সংস্পর্শে এসে সেগুলিকে বিষাক্ত না করে এবং শিশুদের নাগালের বাহিরে থাকে।
ইঁদুর দমনের বিভিন্ন কলা কৌশল ও অন্যান্য বিষয় সবাই অবহিত করার জন্য এ প্রবন্ধে বিষয়গুলো সহজ তথা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে ডিএই তে কর্মরত প্রত্যেক উপসহকারী কৃষি অফিসার কমপক্ষে ৬০০ অংশীজনকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করবেন। আশা করা যায় এ সমন্বিত ইঁদুর দমন কার্যক্রম সমাজের সকল স্তরের মানুষের জীবনে উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে ইঁদুর দমনকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করবে এবং আমাদের মাঠ ফসল, গুদামজাত শস্য, ঘরবাড়ি অন্যান্য সম্পদ ও অবকাঠামো রক্ষায় এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

লেখক : পরিচালক,চলতি দায়িত্ব উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। ফোন : ৯১৩১২৯৫, ই-মেইল :dppw@dae.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon